top

তওবা করার সঠিক নিয়ম(প্রশ্ন ও উত্তর)

তোওবা সম্পর্কে আশ্চর্য সুন্দর একটা হাদীসঃ

তওবা করার সঠিক নিয়ম. freesolution420.blogspot.com

.
আমরা সবাই পাপ করি, কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে সেই বান্দা সবচাইতে ভালো, যে পাপ করে তোওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়। বান্দা আল্লাহর কাছে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে তোওবা করবে, এই কাজটা আল্লাহ খুব পছন্দ করেন, কারণ তিনি হচ্ছেন অত্যন্ত ক্ষমাশীল। একারণে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে ৭০ বা ১০০ বার তোওবা করতেন, সুবহা’নাল্লাহ! আসুন আমরা তোওবাহ সম্পর্কে আশ্চর্য সুন্দর একটা হাদীস পড়ি, যা আমাদেরকে পাপ কাজ ত্যাগ করে তোওবাহ করতে উদ্ধুদ্ধ করবে, ইন শা আল্লাহুল আ’জীজ।
________________________
আবদুর রহমান বিন জুবাইর, তিনি আবু তালীব শাতবুল মামদুদ এর কাছ থেকে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেনন। আবু তালীব শাতবুল মামদুদ রাদিয়াল্লাহু আ'নহু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আসেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, একজন খুবই বৃদ্ধ ব্যক্তি লাঠিতে ভর দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আসেন, (বয়সের কারণে) যার চোখের পাতা তার চোখের সাথে লেগে গিয়েছিল। তিনি রাসুলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, যদি কোন লোক সব ধরণের পাপই করে থাকে, এমন কোন পাপ নেই যা সে করেনি (ছোট-বড় সব ধরনের পাপই করেছে)। [অপর বর্ণনায় এসেছে যে, সে সব পাপই করেছে, তার পাপ যদি দুনিয়াবাসীর উপর বন্টন করে দেয়া হতো তাহলে তাদেরকে ধ্বংস করে দিত।]
.
এমন লোকের জন্যে কি তোওবা করার কোন সুযোগ রয়েছে?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনি কি ইসলাম গ্রহণ করছেন?
.
লোকটি বললো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নাই, আর নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসুল।
.
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনি ভাল কাজ করবেন এবং মন্দ (পাপ) কাজ পরিত্যাগ করবেন, তাহলে আল্লাহ তাআ'লা আপনার জন্য সব খারাপ কাজকে নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন।
.
লোকটি বলো, আমার গাদ্দারী ও কুকীর্তি সমূহও (আল্লাহ মাফ করে নেকীতে পরিবর্তন করে দেবেন)?
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।
হাদীসটির বর্ণনাকারী বলেন, ঐ লোকটি (এই কথা শুনে অত্যাধিক খুশি ও আশ্চার্যান্বিত হয়ে) বার বার "আল্লাহু আকবার" (আল্লাহ মহান) ধ্বনি উচ্চারণ করছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে চোখের আড়াল হয়ে যায়।
.
তবারানী, বাজ্জার; আল-মুনজেরী তারগীব গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, এর সনদ মজবুত ৪/১১৩; ইবনে হাজার ইসাবা গ্রন্থে বলেন, হাদীসটি শর্ত মোতাবেক রয়েছে ৪/১৪৯।
________________________
.
তোওবা সংক্রান্ত দুইটি প্রশ্নের উত্তরঃ
.
(১) আমি আল্লাহর নিকট তাওবা করেছি। আমার নিকট হারাম জিনিসপত্র রয়েছে যেমন: বাদ্যযন্ত্র, ক্যাসেট, ফ্লিম ইত্যাদি। এসব জিনিস বিক্রি করা কি জায়েয হবে। বিশেষ করে এজন্য যে, এর মূল্য কিন্তু অনেক হবে!
.
উত্তরঃ হারাম জিনিস বিক্রি করা হারাম এবং এর মূল্যও হারাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ কোন কিছু হারাম করলে তার মূল্যও হারাম করেছেন।” (আবু দাউদ, হাদীসটি সহীহ)
.
আর আপনি জানেন যে, অন্যরা তা হারাম কাজেই ব্যবহার করবে, এজন্য তা বিক্রি করা জায়েয হবে না। কেননা আল্লাহ এ ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেনঃ “এবং তোমরা গুনাহ ও অন্যায় কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো না।”
.
আপনি দুনিয়াতে যতই ক্ষতিগ্রস্ত হননা কেন। আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা উত্তম ও দীর্ঘস্থায়ী। তিনি আপনাকে তাঁর দয়া ও করুণা দ্বারা উত্তম প্রতিফল দিবেন।
.
.
.
(২) আমি একজন পথভ্রষ্ট মানুষ ছিলাম। ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ ছড়াতাম এবং বিভিন্ন গল্প লিখার মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষাক্ত বাণী প্রচার করতাম। কবিতার মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়াতাম। মহান আল্লাহ আমাকে তার বিশেষ রহমতে রক্ষা করেছেন, অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন এবং হেদায়াত দান করেছেন, এখন কিভাবে তাওবা করবো?
.
উত্তরঃ এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার উপর বিরাট অনুগ্রহ ও নিয়ামত। এটিই প্রকৃতপক্ষে হেদায়েত। সুতরাং এজন্য আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি এবং তার নিকট দু'আ করছি তিনি যেন আপনাকে মজবুত রাখেন এবং আরো বেশী অনুগ্রহ দান করেন। যে ব্যক্তি তার কথা ও কলমের দ্বারা ইসলামের বিরুদ্ধে ভ্রান্ত ধারণা বা বিদআত ও অশ্লীলতা ছড়ায় তাকে অবশ্যই একাজগুলো করতে হবে:
.
#প্রথমত: সে যেন এসব থেকে তাওবা করে এবং ঘোষণা করে যে, সে এসব থেকে ফিরে এসেছে। যথাসম্ভব সব রকমের মাধ্যম ব্যবহার করে এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলে যে, এসব ভ্রান্ত ও বাতিল বিষয় ছিল তাহলে যারা তার কথায় বিভ্রান্ত হয়েছিল তারা সঠিক পথে ফিরে আসবে। এবং যেসব সন্দেহ ও ধুম্রজাল ছড়িয়েছিল তা পরিষ্কার করে দিবে এবং তা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। এই ভাবে পরিষ্কার করে দেয়াটা ওয়াজিব, তাওবার ওয়াজিবের অন্তর্গত।
.
মহান আল্লাহ বলেনঃ “কিন্তু যারা তাওবা করেছে, নিজেদের সংশোধন করেছে এবং বর্ণনা করেছে তারা হলো সেই লোক যাদের তাওবা আমি কবুল করবো এবং আমিই একমাত্র তাওবা কবুলকারী, দয়ালু।” (সূরা আল বাকারা: ১৬০)
.
#দ্বিতীয়ত: সে যেন তার কলম ও জবানকে ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত করে এবং তার শক্তিকে ও সামর্থকে ইসলামকে বিজয়ী করার কাজে নিয়োজিত করে, আর মানুষের নিকট হক শিক্ষা এবং এর দাওয়াত পৌছায়।
.
#তৃতীয়ত: এই শক্তিকে যেন ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে এবং তাদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত তুলে ধরে, যেমন ভাবে এর পূর্বে তাদেরকে সাহায্য করত এবং ইসলামের শত্রুদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করত। সে যেন ইসলামের হকের অস্ত্র হয়ে যায় বাতিলের বিরুদ্ধে। এভাবে বিভিন্ন হারাম কাজের কদর্যতা বর্ণনা করে ইসলামের পথে মানুষকে আহ্বান করে। যেমন হয়তো একদিন সুদের পক্ষে কথা বলেছে, এখন সুদের বিরুদ্ধে কলম ধরবে, এর অপকারিতা ও ভয়াবহতা তুলে ধরে পূর্বের পাপের কাফ্ফারা আদায় করবে। মহান আল্লাহই প্রকৃত হেদায়েত দাতা।

Post a Comment

0 Comments

Close Menu